অনলাইন ডেস্ক:
করোনার ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে পুঁজিবাজার। দীর্ঘদিন লোকসান কিংবা মূলধন আটকে খাবি খাওয়া বিনিয়োগকারীরা এখন আশা দেখছেন পুঁজিবাজারে। গত আগস্ট থেকে পুঁজিবাজারের দৃশ্যপট পাল্টে যাওয়ায় অনেকে লোকসান থেকে মুনাফায় ফিরেছেন। বাজার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় বাড়ছে শেয়ারের দাম। মুনাফার আশায় ব্রোকারেজ হাউসে বেড়েছে বিনিয়োগকারীদের আনাগোনা।
সূত্র জানায়, সুশাসন ও স্বচ্ছতা ফেরার আশ্বাসে আবারও পুঁজিবাজারমুখী হয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। প্রতিদিনই বাজারে বিনিয়োগকারী আসছে। ঢুকছে লাখ লাখ টাকা। তারল্য সংকটে পড়া পুঁজিবাজারে এখন বেড়েছে টাকার প্রবাহ। বিনা প্রশ্নের শর্তে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ায় অপ্রদর্শিত অর্থ পুঁজিবাজারে আসছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ ছাড়া সঞ্চয়ের অন্যান্য মাধ্যম থেকে ভালো রিটার্নের আশায় এখন অনেকে পুঁজিবাজারে ঝুঁকছেন।
তা ছাড়া করোনায় অর্থনীতির ভিত দুর্বল হওয়ায় টাকার জোগান বাড়াতে কালো টাকা মূলধারায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে আবাসন খাতে এলাকাভেদে নির্দিষ্ট হারে কর ও ১০ শতাংশ কর দিয়ে পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট হারে কর প্রদানের পাশাপাশি পুঁজিবাজারে এক বছর বিনিয়োগ রাখতে হবে।
সূত্র জানায়, তারল্য সংকটের কারণে পুঁজিবাজার এগোতে পারছিল না। মার্চেন্ট ব্যাংক ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর সক্ষমতা কমে যাওয়ায় তারাও সক্রিয় হতে পারেনি। মন্দায় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাও লোকসানে জড়িয়ে যায়। গত আগস্ট থেকে পুঁজিবাজার এগোতে থাকে। শেয়ার কেনা বাড়ায় লেনদেন বাড়ছে। মূল্যসূচকও বাড়ছে। নতুন নতুন মূলধন বাজারে আসায় তারল্যপ্রবাহ বেড়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত কালো টাকা ঢুকছে। অপ্রদর্শিত অর্থ বিনা শর্তে মূলধারায় আনার সুযোগ পাওয়ায় অনেকে পুঁজিবাজারে আসছেন। তবে কী পরিমাণ অর্থ আসছে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো ধারণা দিতে পারেননি তাঁরা।
কালো টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে সেটা ব্যক্তির রিটার্ন দাখিলে উল্লেখ করতে হবে। কাজেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা, পুঁজিবাজারে কালো টাকা আসতে শুরু করেছে, ফলে তারল্য সংকট কাটিয়ে টাকার প্রবাহ বেড়েছে। তবে কী পরিমাণ টাকা আসছে, সেই হিসাব দিতে পারবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
গত ২৫ আগস্ট এক অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়্যারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমও বলেছেন, ‘পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার প্রভাব পড়েছে। বাজারে অর্থের প্রবাহ বেড়েছে। অর্থের প্রবাহ বাড়লেও করদাতার আয়কর রিটার্নে তেমন সাড়া পড়েনি। আয়কর রিটার্ন এলে বোঝা যাবে কী পরিমাণ অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ হয়েছে।’
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্যানুযায়ী, গত আগস্টে পুঁজিবাজারে মূলধন বেড়েছে ৪১ হাজার ৪৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ওই মাসেই লেনদেন হাজার কোটি টাকার ওপরে উঠে আসে। ফলে বাড়ে বিনিয়োগকারীর সক্রিয়তা। আর চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ৯ দিনে পুঁজিবাজারে মূলধন বেড়েছে ১৪ হাজার ৮২০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। সেই হিসাবে গত আগস্ট থেকে পুঁজিবাজারে মূলধন বেড়েছে ৫৫ হাজার ৮৬৪ কোটি ২০ লাখ টাকা।
ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, ‘পুঁজিবাজার এখন তারল্যে ভরপুর। প্রতিদিনই বাজারে টাকা আসছে। বাজেটে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ায় মূলধন পুঁজিবাজারে আসছে। তবে কী পরিমাণ অর্থ আসছে সেটা বলা কঠিন, কিন্তু সেই অপ্রদর্শিত অর্থের প্রভাব পড়ছে।’
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়্যারম্যান ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাজারে অপ্রদর্শিত অর্থের প্রভাব রয়েছে। তবে কতটা রয়েছে, সেটা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব না। এ ছাড়া অন্যান্য উৎস থেকে পুঁজিবাজারে ভালো রিটার্ন পাওয়ার আশায় বিনিয়োগকারীরা বাজারে আসতে শুরু করেছে। টাকার প্রবাহ বেড়েছে।’
সুত্র: কালের কন্ঠ