স্টাফ রিপোর্টার :
ঢাকা: ৫ই আগস্টের মহাবিপ্লবের পর যখন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা গা-ঢাকা দিয়েছেন, তখন মহিলা যুবলীগের ঢাকা উত্তর শাখার সহ-সভাপতি নাজিবা নাহিদ খান তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে কেবল পারিবারিক আর্থিক কেলেঙ্কারি নয়, বরং রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকারও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এই রহস্যময় নারী নেত্রীর ঔদ্ধত্য ও দাপট রাষ্ট্রের আইনি ও নৈতিক কাঠামোকে উপহাস করছে।
নাজিবা নাহিদ খান, যিনি পদ্মা গ্রুপ অব কোম্পানির পরিচালক, তার নিজের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে মতিঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। তার অভিযোগ অনুযায়ী, অসুস্থ বাবার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে পরিবারের সদস্যরা কোম্পানির সম্পদ বিক্রি করে দিয়েছেন এবং ব্যাংকের মোটা অঙ্কের ঋণ শোধ না করে সেই টাকা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেছেন। এই আর্থিক জালিয়াতির অভিযোগের পাশাপাশি জানা যায়, তিনি নিজেই ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করার এক অভিনব কৌশল অবলম্বন করেছেন। তার বাবা তাকে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করিয়েছিলেন, যা তার ব্যক্তিগত জীবনের অন্ধকার দিকটি উন্মোচন করে।
নাজিবা নাহিদ খানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, যার মধ্যে ৫ই আগস্টের ছাত্র আন্দোলনে অর্থ যোগান দেওয়া এবং মুখ্য ভূমিকায় থাকার অভিযোগ অন্যতম। তার বিরুদ্ধে যেসব মামলা রয়েছে, সেগুলো হলো:
মোহাম্মদপুর থানা: তিনটি মামলা, যার মধ্যে একটি সিআর মামলা (৮৭৯/২০২৫) এবং অন্য দুটি মামলা নম্বর (৮৫/৭/২০২৫) ও (১৩/৭/২০২৫)।
বাড্ডা থানা: সিআর মামলা (৩৩৬/২০২৫)।
মিরপুর থানা: দুটি মামলা, একটি সিআর মামলা (৬৩৫/২০২৫) এবং অন্যটি মামলা নম্বর (০৭/৮/২০২৫)।
কদমতলী থানা: আমলী সিআর মামলা (৪৯১/২০২৫)।
এই গুরুতর ফৌজদারি অভিযোগ এবং একাধিক মামলার পরেও একজন ব্যক্তি কীভাবে একটি নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারেন, তা জনমনে গভীর সংশয় তৈরি করেছে। তার অতীত মাদকাসক্তি এবং পুনর্বাসন কেন্দ্রে থাকার বিষয়টি তার রাজনৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করার বদলে যেন আরও বেশি শক্তি যোগাচ্ছে।
নাজিবা নাহিদ খানের এই বেপরোয়া আচরণ দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের জন্য এক চরম পরীক্ষার বিষয়। যখন অধিকাংশ রাজনৈতিক নেতা জনরোষের ভয়ে লুকিয়ে আছেন, তখন তার মতো একজন বিতর্কিত নেত্রীর প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানো এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার পায়তারা করা প্রমাণ করে যে, রাজনৈতিক শুদ্ধি অভিযান এখনো পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর হয়নি। প্রশাসনের উচিত অবিলম্বে এই গুরুতর অভিযোগগুলোর একটি নিরপেক্ষ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা এবং দোষ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। একই সাথে, এই ঘটনাটি রাজনীতির অঙ্গনে লুকিয়ে থাকা অপরাধীদের মুখোশ উন্মোচনে সহায়তা করবে।