Breaking News

গাউকের প্রধান ইমারত পরিদর্শক ওমর ফারুকের লাগামহীন দুর্নীতির ভয়াল থাবা!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট :

গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (গাউক) প্রধান ইমারত পরিদর্শক ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, যা গাজীপুর নগরীকে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অপরিকল্পিত ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের প্ল্যান ছাড়পত্র প্রদান, সাধারণ নাগরিক ও শিল্প মালিকদের জিম্মি করে ব্যাপক অর্থ আদায়, এবং নিয়মবহির্ভূতভাবে শত শত ফাইল নিষ্পত্তির মতো জঘন্য অপরাধের অভিযোগ উঠেছে। তার এই লাগামহীন ও বেপরোয়া দুর্নীতি গাজীপুরের নগর পরিকল্পনা এবং জননিরাপত্তার জন্য এক মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ওমর ফারুক তার পদমর্যাদার চরম অপব্যবহার করে নির্বিচারে দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছেন। সারাবো এলাকাসহ একাধিক মৌজায় অনুমোদনহীন ও বিপজ্জনক অসংখ্য ভবনের প্ল্যান তিনি কোনো রকম পরিদর্শন ছাড়াই মোটা টাকার বিনিময়ে ছাড়পত্র দিয়েছেন। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, গাউকের প্রধান ইমারত পরিদর্শক হওয়ার সুবাদে সমগ্র এলাকায় তার অবাধ বিচরণ ছিল এবং গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই নির্মিত বহু স্থাপনার পেছনে তার সরাসরি মদদ রয়েছে। এমনকি, মাধবপুর এলাকায় সড়কের গা ঘেঁষে নির্মিত একটি সাততলা ভবনের অনুমোদন প্রক্রিয়ায় তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

কুনিয়া মৌজার মধ্যপাড়া, গাছা থানার মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন নামের এক ব্যক্তি অবৈধ নির্মাণ প্রসঙ্গে গত ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে একটি অভিযোগ দাখিল করেছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, সেই নির্মাণও টাকার বিনিময়ে চালু করা হয়েছে এবং অনুসন্ধান সূত্রে দেখা যায়, সেটি গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই নির্মিত হয়েছে। এছাড়াও, সারাবো মৌজার কয়েকটি পাঁচতলা ভবনেও তিনি প্ল্যান পাস দিয়েছেন, যা পূর্বে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কোনো নিয়ম না মেনেই নির্মিত হয়েছিল। প্রধান ইমারত পরিদর্শক হওয়ার সুবাদে ওমর ফারুক অসংখ্য অবৈধ নির্মিত বিল্ডিং এবং বেশ কিছু শিল্প কারখানার প্ল্যান পাস করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

তার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে নোটিশ দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগও রয়েছে। বিশেষ কিছু এলাকায় এমন তথ্য পাওয়া যায় যে, গাজীপুর কর্তৃপক্ষ নোটিশ প্রদান করলেও ওমর ফারুকের মতামতের ভিত্তিতেই আবার কার্যক্রম সবুজ সংকেত পেত। অভিযোগ রয়েছে, তিনি এই দুর্নীতির চক্রকে নিজের মতো করে সাজিয়েছিলেন।

গাউকের প্রধান ইমারত পরিদর্শক হওয়ায় প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ ফাইলই তার টেবিলে আটকে থাকত। অভিযোগ উঠেছে, তিনি টাকার লোভে ফাইল আটকে রেখে সাধারণ মানুষ ও শিল্প মালিকদের চরম ভোগান্তির মুখে ঠেলে দিতেন। সম্প্রতি তার দুর্নীতির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসলে চাপের মুখে তিনি একদিনেই অর্ধশত ফাইল নিষ্পত্তি করেছেন, যা স্বাভাবিক প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় একেবারেই অসম্ভব, অস্বাভাবিক এবং সম্পূর্ণ বেআইনি। এটি তার দুর্নীতির প্রকৃষ্ট প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ওমর ফারুকের দুর্নীতির মূল লক্ষ্য ছিল ফ্যাক্টরির মালিকরা, যেখানে চলত মোটা অঙ্কের ঘুষের অবাধ বাণিজ্য। বহু পুরোনো বাণিজ্যিক ভবনগুলোতেও তিনি অবৈধভাবে ছাড়পত্র দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে, যার ফলে নিয়ম ভেঙে গড়ে ওঠা এসব স্থাপনা এখন ঝুঁকির কারণ। এমনকি, অসংখ্য ফ্যাক্টরির গুরুত্বপূর্ণ ফাইল তার টেবিলে দিনের পর দিন আটকে ছিল, কারণ লেনদেনের ‘হিসাব’ না মেলায় তিনি সেগুলোর নিষ্পত্তি করেননি ।

তার বিরুদ্ধে অফিসিয়ালি পদাবনতি (ডিমোশন) দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রধান ইমারত পরিদর্শকের দায়িত্ব পাওয়ায় এই পদের সুযোগ নিয়েই তিনি তার দুর্নীতির জাল বিস্তৃত করেছেন। অভিযোগ উঠেছে, তার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানেই গাউকের ভেতরে দালালদের এক বিশাল ও শক্তিশালী চক্র গড়ে উঠেছে, যা পুরো ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দিচ্ছে।

Print This Post

About newsdesk

Check Also

গাজীপুরের গাছায় সাবেক কাউন্সিলর জুয়েল মন্ডল এর অত্যাচারে এরশাদ পরিবার এখন গৃহহীন

নিজস্ব প্রতিনিধি : সাবেক ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, গাছা থানার যুবলীগের সভাপতি পদপ্রার্থী, সাবেক কাউন্সিলর, …

Leave a Reply