Breaking News

ধূমপানে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রোগীরা, হাসপাতাল এলাকায় নিষিদ্ধের দাবি

ধূমপানের কারণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রোগীরাও ভয়াবহ ক্ষতির শিকার হচ্ছে। এই অবস্থায় অধূমপায়ীদের সুরক্ষায় সব প্রকার পাবলিক প্লেসসহ হাসপাতাল এলাকায় ধূমপান নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের দাবি, তামাক ব্যবহারের ফলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যানসারসহ নানাবিধ রোগে মানুষ আক্রান্ত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী এ দেশে তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতিদিন প্রায় ৪৪২ জন মানুষ মারা যায়। তামাকের ভয়াবহতা থেকে জনস্বাস্থ্যকে রক্ষা করার লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ে আইনটি সংশোধন করা প্রয়োজন।

সোমবার (১৫ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর বিএমএ ভবনে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশন অব দ্য রুরাল পুয়র (ডরপ) এবং বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত “প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪০ সালের পূর্বেই তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে করণীয়” শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, বর্তমানে দেশে মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশই অসংক্রামক রোগের কারণে ঘটছে। আর এই অসংক্রামক রোগ সৃষ্টির অন্যতম কারণ ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার। তাই এই অকাল মৃত্যু ঠেকাতে অবিলম্বে বিদ্যমান আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

তিনি বলেন, আমরা দেখি যে, হাসপাতালগুলোর ক্যান্টিনগুলোতে ধূমপানের একটা বড় আয়োজন থাকে। অথচ এটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চাইলেই বন্ধ করে দিকে পারে। শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর আশপাশে যদি ধূমপান-তামাক নিষিদ্ধ করা যায়, তাহলে রোগীদের জন্যও সুচিকিৎসা পেতে সহায়ক হবে।

ধূমপান বন্ধে চিকিৎসকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, চিকিৎসকদের চেম্বারগুলোতে চিকিৎসকরা ধূমপান ও তামাকের বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে রাখতে পারে। যেসব রোগীরাই আসবে, তারা দেখবে যে ধূমপান ও তামাক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এক লাখ ২০ হাজার চিকিৎসক যদি এ বিষয়ে এগিয়ে আসেন, অবশ্যই বড় একটা প্রভাব পড়বে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হিসেবে আমিও আমার ভূমিকা পালন করব এবং চিকিৎসকদের মধ্যে এই বার্তাটি পৌঁছে দিব।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, আইনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তামাক কোম্পানিগুলো সিএসআরের নাম করে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে; অন্যদিকে আধুনিকতার টোপ দেখিয়ে-সিগারেটের মতো নিত্যনতুন পণ্য তরুণদের হাতে তুলে দিয়ে বাজার সম্প্রসারণ করছে তারা। এই আগ্রাসন ঠেকানোর জন্য আইনকে শক্তিশালী করার আর কোনো বিকল্প নেই।

তিনি আরও বলেন, ধূমপান বন্ধে সচেতনতা তৈরি একটা বড় মাধ্যম। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে সেমিনার করা যেতে পারে। আতঙ্কের বিষয়গুলো তাদের সামনে তুলে ধরতে হবে। নারীদের মধ্যে ধূমপানের ক্ষতির দিকটা তুলে ধরতে পারলে অবশ্যই কমে আসবে। আমরা যদি দেখি নারীদের মধ্যে ধূমপান দিনদিন বাড়ছে, কিন্তু পুরুষদের মধ্যে আবার কিছুটা কমার প্রবণতাও আছে।

বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল বলেন, তামাকের পক্ষে কোনো যুক্তি নেই। জনস্বাস্থ্যের পাশাপাশি এর ক্ষতির ভয়াবহতা বহুমূখী। তামাক থেকে যে ২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকার রাজস্ব আসে তার থেকে তামাকজনিত রোগের পেছনে সরকারের বার্ষিক ব্যয় ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। এখানেও ক্ষতির পরিমাণ বেশি। এসব দিকগুলোকে নীতিনির্ধারক ও সাধারণ মানুষের সামনে বেশি বেশি তুলে ধরতে হবে।

বক্তারা আরও বলেন, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে এফসিটিসির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত খসড়ায় যে বিষয়গুলো প্রস্তাব করা হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- অধূমপায়ীদের সুরক্ষার জন্য সব পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা, তামাক পণ্যের প্রচার বন্ধ করার জন্য বিক্রয় কেন্দ্রে তামাক পণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেট বা ইমার্জিং হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্ট আমদানি, উৎপাদন, ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা, তামাক পণ্যের সব প্রকার খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা ও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা।

ডরপ’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী এএইচএম নোমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে আমাদের প্রত্যেককেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সক্রিয় হতে হবে।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিটিএফকে লিড পলিসি এডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, বিসিআইসির চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান, টাঙ্গাইল জেলা সমিতির সভাপতি ড. মো. ইব্রাহীম হোসেন খানসহ আরও অনেকে।

Print This Post

About newsroom

Check Also

বিশাল তেলের খনির সন্ধান পেল কুয়েত

মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় অঞ্চলের তেলসমৃদ্ধ দেশ কুয়েত আর একটি বড় জ্বালানি তেলের খনির সন্ধান পেয়েছে। দেশটির …

Leave a Reply