Breaking News

‘আমার জাদুরে মারল কেন’

অনলাইন ডেস্ক :

ভোটকেন্দ্রের ১০০ গজ দূরে রেললাইনের পাশের বস্তিতে প্রতিদিনের মতো ঘুম ভেঙেছিল আলাউদ্দিন আলোর (২০)। সকালে ভোট শুরুর পরপরই দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে উত্তেজনার পারদ চড়লেও এসব স্পর্শ করেনি তাঁকে। নাশতা করে এলাকার একটি বাড়ির নালা নির্মাণের কাজে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। সেই উদ্দেশ্যে বের হন। ভোটকেন্দ্রের সামনে গোলযোগ দেখে থমকে যান। দুই পক্ষের সংঘর্ষ তখন গোলাগুলিতে রূপ নিয়েছে। আচমকা একটি বুলেট এসে বিদ্ধ করে তাঁকে। সেখানেই লুটিয়ে পড়েন। হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মৃত্যু হয় তাঁর।

গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের ইউসেফ টেকনিক্যাল স্কুল ভোটকেন্দ্রের সামনে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত হন তিনি।

কুমিল্লার বাউনিয়া এলাকার মৃত সুলতান মিয়ার ছেলে আলাউদ্দিন। ৯ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। মা, স্ত্রী, সন্তান, ভাইকে নিয়ে খুলশী থানার ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনের পাশ ঘেঁষে আমবাগান এলাকায় ছিন্নমূল বস্তিতে থাকতেন। কখনো নির্মাণশ্রমিক, আবার কখনো দিনমজুরি করে চলত সংসার। রাজনীতির মারপ্যাঁচ বুঝতেন না তিনি। তাঁর মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তাঁর স্বজনেরা। গতকাল দুপুরে আমবাগান এলাকায় আলাউদ্দিনের ঝুপড়ি ঘরে গিয়ে দেখা গেল করুণ চিত্র। ঘরের সামনে মাটিতে শুয়ে বিলাপ করছিলেন তাঁর বৃদ্ধ মা আছিয়া খাতুন। ক্ষণে ক্ষণে জ্ঞান হারাচ্ছিলেন তিনি। জ্ঞান ফিরলেই দুই হাত বুকে চাপড়িয়ে আহাজারি করে বলছিলেন, ‘আমার জাদু কই। আমার জাদুরে মারল কেন।’

এই ঘটনার জন্য ওই ওয়ার্ডে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ-সমর্থিত ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরীকে অভিযুক্ত করছে নিহতের পরিবার। তবে তিনি তা অস্বীকার করছেন।

সংঘর্ষের সূত্রপাত যেখানে, সেখানকার কিছু প্রত্যক্ষদর্শীর কাছ থেকে জানা গেল ঘটনার পূর্বাপর। এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ থেকে সমর্থন পাওয়া ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরীর সমর্থকদের সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থী মাহমুদুর রহমানের উত্তেজনা চলছিল ভোট গ্রহণের শুরু থেকেই। সকাল ১০টার দিকে মো. জুয়েল নামের মাহমুদের এক অনুসারীকে মারধর করা হয়। এই ঘটনার পর ৩০ থেকে ৩৫ জনের একটি দল নিয়ে কেন্দ্রের সামনে অবস্থান নেয় মাহমুদ পক্ষ। তখনই ওয়াসিমের অনুসারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে ভোটকেন্দ্রের উত্তর পাশ থেকে আসা একটি গুলি লাগে আলাউদ্দিনের পেটে। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে দফায় দফায় সংঘর্ষের পর পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

আলাউদ্দিনের বড় বোন জাহানারা বেগম বলেন, নাশতা খেতে বের হয়ে ভাই আর ফিরে আসেননি। কাজে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। এর আগেই গুলি করে মেরে ফেলা হয়। এই ঘটনায় আওয়ামী লীগ-সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ওয়াসিমকে দায়ী করেন তিনি।

জাহানারা কথাগুলো বলার সময় ফুফুর পাশেই ছিল আলাউদ্দিনের এক বছর বয়সী কন্যাশিশু জান্নাত আক্তার। কিছু না বুঝলেও দাদি, মা ও ফুফুর আহাজারি ছুঁয়ে গেছে তাকেও। চেহারায় ছিল বিষাদের ছায়া। জান্নাত জানে না বাবা আর কখনো ফিরবেন না। বাবাকে ছাড়াই কাটবে তার বাকিটা জীবন।

সুত্র : প্রথম আলো

Print This Post

About Amena Fatema

Check Also

রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য-বিনিয়োগ বাড়ানোর তাগিদ

বাংলাদেশ-রাশিয়া সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর …

Leave a Reply