অনলাইন ডেস্ক :
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের বিশনন্দী গ্রাম। সেখানকার বাসিন্দা ডালিমের নির্মাণাধীন একটি ঘরের বালুর ভিটি থেকে দুর্গন্ধ বেরোতে থাকে। ডালিম গন্ধের উৎস বের করতে বালুতে কোদাল চালান। একটু গভীর করতেই আঁতকে ওঠেন ডালিম। বালুর নিচে লাশ! বেরিয়ে আসে পচা-গলা নারীর লাশ। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করে। গত বছর ১০ আগস্টের এই ঘটনার তদন্তে পুলিশ কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি।
এক পর্যায়ে গত ২৯ অক্টোবর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নারায়ণগঞ্জ স্ব-উদ্যোগে মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। পুলিশ লাশ গুমের ৪৩ দিনের মাথায় হত্যার রহস্য উদঘাটন করে। গ্রেফতার করা হয় খুনি ইউনুসকে। সিলেটের জৈন্তাপুরে সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেফতারের পর তার স্বীকারোক্তিতে লাশ গুমের কাজে ব্যবহৃত কোদালটিও উদ্ধার করা হয়। পিবিআই জানায়, হত্যাকান্ডের শিকার ফাতেমা আক্তার (২৪)-এর বাড়ি আড়াইহাজার থানার গহরদী গ্রামে হলেও তিনি মানিকপুরে মামা ইলিয়াস মোল্লার বাড়িতে থাকতেন।
ইউনুস আলীর (২৫) বাড়ি ফাতেমার মামার বাড়ির পাশে। ইউনুস আলী অবিবাহিত এবং ৯ বছর মালয়েশিয়ায় চাকরি করে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ছুটিতে দেশে আসেন। তখন ফাতেমার নানা-নানী বিভিন্ন অজুহাতে ইউনুসকে তাদের ঘরে ডেকে নিতেন এবং ফাতেমার সঙ্গে ইউনুসের বিয়ের প্রস্তাব দেন। পাশাপাশি বাড়িতে থাকায় ফাতেমার সঙ্গে ইউনুসের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ইতিমধ্যে ইউনুসের পরিবার বিশনন্দী ডেংপাড়া এলাকায় নতুন বাড়ি করে সেখানে চলে যায়।
পিবিআই জানায়, বিভিন্ন সময় ইউনুস মানিকপুরে অবস্থিত তাদের পুরনো ফাঁকা বাড়িতে আসতেন এবং ফাতেমার সঙ্গে প্রেম ও ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি করে এক পর্যায়ে শারীরিক মেলামেশা শুরু করেন। তাদের প্রেমের বিষয়টি উভয় পরিবারের লোক ও প্রতিবেশীরা জেনে যান। ইউনুসের পরিবার তাদের সম্পর্কের বিরোধিতা করে ইউনুসের বিয়ের জন্য কনে দেখা শুরু করে। শারীরিক সম্পর্কের এক পর্যায়ে ফাতেমা গর্ভবতী হয়ে পড়ায় ইউনুসকে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া হয়। কিন্তু ইউনুস বিয়ে করতে রাজি নন।
এ অবস্থায় গত ১০ আগস্ট বিকালে ইউনুস মোবাইল ফোনে ফাতেমাকে ডেকে নিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করেন। ওই দিন রাত ১০টার দিকে ইউনুস ফাতেমার সঙ্গে শারীরিক মেলামেশা করেন। এক পর্যায়ে কৌশলে ফাতেমাকে গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। হত্যার পর লাশ নতুন বাড়ির পেছনে ডালিমের নির্মাণাধীন ঘরের বালুভর্তি ভিটিতে এনে কোদাল দিয়ে গর্ত করে বালুচাপা দেন। পরবর্তীতে ডালিমকে দ্রুত ভিটি পাকা করতে তাগিদ দেন। ডালিম ঘরের কাজ করা অবস্থায় গত ১৫ আগস্ট ভিটি হতে দুর্গন্ধ পান।
এরপর কোদাল দিয়ে বালু সরালে অর্ধপচা লাশ বেরিয়ে আসে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।পরবর্তীতে পিবিআই মামলার তদন্ত শুরু করে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ইউনুসকে গত ৮ অক্টোবর সিলেটের জৈন্তাপুর বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে।
সুত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন