অনলাইন ডেস্ক :
কুষ্টিয়ার মিরপুর পৌরসভার নওপাড়া এলাকার বাসিন্দা আতর আলী শেখ (৬২) বার্ধক্যের কারণে গত ৬ আগস্ট মারা যান। একই এলাকার রাবেয়া খাতুন (৭৮) গত ১০ জুলাই এবং নুর ইসলাম প্রামাণিক (৫০) গত ২১ ডিসেম্বর মারা যান। এ ছাড়া স্থানীয় লোকজন আরও কয়েকজনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন। বেশ কয়েকজন কর্মসূত্রে বিদেশে এবং বিভিন্ন জেলায় অবস্থান করছেন। এ রকম অন্তত ২৫ জন রয়েছেন বলে মুখে মুখে হিসাব করে জানালেন স্থানীয় লোকজন।
তবে নওপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটের হিসাব বলছে মৃত এবং বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তিরাও ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত মিরপুর পৌরসভা নির্বাচনে ভোট দিতে এসেছিলেন! কারণ, ওই কেন্দ্রে সেদিন শতভাগ ভোট পড়েছিল। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বরত রিটার্নিং কর্মকর্তা কেন্দ্রভিত্তিক যে ফলাফল প্রকাশ করেছেন, তাতেই এ রকম অস্বাভাবিক চিত্র উঠে এসেছে। গতকাল বুধবার দুপুরে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে কুষ্টিয়া, মিরপুর, ভেড়ামারা ও কুমারখালী নির্বাচনে মেয়র পদে কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলের এসব উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যে মিরপুর পৌরসভা নির্বাচনের কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১৬ জানুয়ারি ব্যালটে অনুষ্ঠিত মিরপুর পৌরসভা নির্বাচনে মোট ১০টি কেন্দ্রে গড়ে ভোট পড়েছিল ৮৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এর মধ্যে ৭টিতে ৮০ শতাংশের ওপরে, দুটি কেন্দ্রে ৭৯ শতাংশের ওপরে এবং নওপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে।
আর জাতীয় নির্বাচন কমিশনের হিসাব বলছে, গত ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের ২৪টি পৌরসভার নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৬৫ শতাংশ। ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপের ৬০টি পৌরসভার নির্বাচনে ভোট পড়ার হার ছিল ৬১ দশমিক ৯২ শতাংশ। সেই অনুপাতে মিরপুর পৌরসভায় অস্বাভাবিক হারে ভোট পড়েছে।
মিরপুর পৌরসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়ার বিষয়ে জেলাজুড়ে এখন নানামুখী আলোচনা চলছে। মিরপুর পৌরসভা নির্বাচনের প্রচারণার সময় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী (বিজয়ী) এনামুল হক দুটি পথসভায় বক্তব্যে প্রকাশ্যে নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সেই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে ভাইরাল হয়েছিল। প্রার্থীর ওই বক্তব্যের প্রভাবেই এ রকম ভোট পড়েছে কি না, তা নিয়েও জল্পনা রয়েছে।
আর মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী বিএনপির মনোনীত ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এমন অস্বাভাবিক ভোট পড়ায় নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, রিটার্নিং কর্মকর্তার যোগশাজশে নৌকা প্রতীককে জেতাতে এমন অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটানো হয়েছে। গত সোমবার কুষ্টিয়া শহরে একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির প্রার্থী রহমত আলী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আরিফুর রহমান এমন অভিযোগ করেন। অবিলম্বে এ নির্বাচন বাতিল করে আবার ভোট গ্রহণের দাবি জানান তাঁরা।
শতভাগ ভোট পড়ার এ অসাধ্য কী করে সাধন করলেন জানতে চাইলে ওই কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রিসাইডিং কর্মকর্তা (স্কুলশিক্ষক) আবু বকর সিদ্দিক গতকাল বুধবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাঁরা বুথে ভোট গ্রহণ করেছেন, তাঁরাই বলতে পারবেন কীভাবে ভোটাররা ভোট দিয়েছেন। যেহেতু শতভাগ ভোট পড়েছে, তাই এটা স্বাভাবিক বিষয়। কারণ, ভোটের দিন কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবেই ভোট গ্রহণ হয়েছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সেলিম তোহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা অবাক করা বিষয় মনে হচ্ছে। কেননা, অনেক ভোটার মারা যেতে পারেন। সেই ভোটগুলো কীভাবে পড়ল, সেটা ভাবার বিষয়। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের খতিয়ে দেখা উচিত।
সুত্র : প্রথম আলো