Breaking News

সরিষার তেলের ১৩টি উপকারিতা

অনলাইন ডেস্ক :

বাজারে সয়াবিন তেলের আবির্ভাবের পর আমরা অনেকেই সরিষার তেলের উপকারিতার কথা ভুলে গেছি। অথচ এক সময় সরিষার তেলই ছিল আমাদের রান্নার প্রধান উপকরণ।

এখনও সরিষা বা সরিষার তেল প্রতিটি বাড়ির রান্না ঘরেই রয়েছে যা – রান্নায়, ভর্তা বানাতে এমনকি মালিশের কাজেও ব্যবহৃত হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে এই তেলের ব্যবহার অতি প্রাচীন। ৩০০০ খৃষ্টপূর্ব আগে থেকে ভারতে চিকিৎসা শাস্ত্রে সরিষার তেল ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সরিষা দানা পিষে সরিষার তেল তৈরি করা হয়। এর রঙ ঘন লালচে হলুদ এবং এর গন্ধ ঝাঁঝালো।

খাঁটি ঘানি ভাঙ্গা সরিষার তেল স্বাস্থ্য উপকারি। সরিষার তেল অনেক বছর ধরেই খারাপ তেলের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল কিন্তু এখন এটা অনেকেই ব্যবহার করছেন। এমনকি নিউ ইয়র্কের খুব জনপ্রিয় কিছু রেস্টুরেন্টের শেফ এই তেল ব্যবহার করছেন।

সরিষার তেলে কি আছে?

সরিষার তেল মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট (Monounsaturated fat) এবং প্রদাহ বিরোধী (anti-inflammatory) উপাদানে সমৃদ্ধ। এছাড়াও সরিষার তেল মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট (Monounsaturated fat) ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড, এন্টি অক্সিডেন্ট এবং বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থে ভরপুর। এতে খুব অল্প পরিমানে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা সম্পৃক্ত চর্বি রয়েছে।

১০০ গ্রাম সরিষার তেলে আছেঃ

স্যাচুরেটেড ফ্যাট                  ১২ গ্রাম

পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট    ২১ গ্রাম

মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট   ৫৯ গ্রাম

কিভাবে এই তেল তৈরি হয়?

এই তেল ২ উপায়ে তৈরি হয়

১। কাচ্চি ঘানি (Cold pressed)

এই প্রক্রিয়ায় সরিষার দানা সরাসরি পিষে এ থেকে তেল বের করা হয় এই তেল হয় খুব ঘন এবং ঝাঁঝযুক্ত। এই তেল সবচেয়ে বেশী স্বাস্থ্য উপকারী। এটা হজম শক্তি বাড়ায়, হৃদপিন্ড ভাল রাখে, চুল গজানোয় সাহায্য করে এবং শরীরের মাংশ শক্ত হয়ে যাওয়া (muscle stiffness) রোধ করে।

এই তেল ২ উপায়ে তৈরি হয়

১। কাচ্চি ঘানি (Cold pressed)

এই প্রক্রিয়ায় সরিষার দানা সরাসরি পিষে এ থেকে তেল বের করা হয় এই তেল হয় খুব ঘন এবং ঝাঁঝযুক্ত। এই তেল সবচেয়ে বেশী স্বাস্থ্য উপকারী। এটা হজম শক্তি বাড়ায়, হৃদপিন্ড ভাল রাখে, চুল গজানোয় সাহায্য করে এবং শরীরের মাংশ শক্ত হয়ে যাওয়া (muscle stiffness) রোধ করে।

২। এসেনশিয়াল অয়েল (Mustard Essential oil)

এই পদ্ধতিতে পেষা সরিষার দানার সাথে পানি, ভিনেগার অথবা অন্য কোন তরল মিশিয়ে বানানো হয়। এই তেল হয় অনেক পাতলা। সরিষার দানায় মাইরোসিনেইস (Myrosinase) এবং সিনিগ্রিন (Sinigrin) নামে দ’টি উপাদান আছে। পানিতে ভিজিয়ে রাখার ফলে এই দু’টি উপাদান বিষাক্ত কম্পাউন্ড সৃষ্টি করে। তাই এই ধরণের তেল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

সরিষার তেলের ১৩টি উপকারিতা

১। হজম প্রক্রিয়া

সরিষার তেল হজম প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে এবং মেটাবলিক রেট বৃদ্ধি করে।

২। সরিষার তেল ব্যথা কমায়

সরিষার তেলে থাকা প্রদাহ বিরোধী (Anti-inflammatory) উপাদান ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। হাঁটুর ব্যথা, অন্যান্য জয়েন্টের ব্যথা, আর্থ্রাইটিস (বাত) এবং রিউম্যাটিক এর ব্যথাও দূর করে।

৩। ক্যান্সার রোধ

এই তেলে থাকা গ্লুকোসিনোলেট (Glucosinolate) নামক উপাদান মলাশয় ক্যান্সার এবং অন্ত্রের ক্যান্সার রোধে সাহায্য করে।

৪। সরিষার তেল ফুসফুস পরিষ্কার রাখে

সরিষার তেল এক ধরণের ডিকঞ্জেস্টেন্ট বা শ্বাসতন্ত্র পরিষ্কারক। এই তেলের সাথে রসুন মিশিয়ে বুকে ও পিঠে লাগালে কফজনিত সমস্যার সমাধান হয়।

৫। হৃদিপিন্ড সুস্থ রাখে সরিষার তেল

সরিষার তেলে থাকা মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ভাল কোলেস্টেরল বৃদ্ধি ক’রে হৃদরোগের ঝুঁকি ৭০% কমিয়ে আনতে পারে।

৬। এজমা রোগে সরিষার তেল

এজমা এটাক (Asthma attack) হলে সরিষার তেল বুকে ঘষলে শ্বাস নেয়ার ক্ষমতা বেড়ে যায়। সবসময় এর ব্যবহার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।

৭। ত্বক ও চুলের যত্নে সরিষার তেল

শীতের সময় এই তেল ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকের শুষ্কতা দূর হয় এবং শরীর গরম থাকে। এই তেলের ব্যাক্টেরিয়া এবং ফাঙ্গাস বিরোধী গুণাগুণ ত্বক ও চুলকে উজ্জ্বল করে তুলে। এই তেল ব্যবহার করলে ত্বক কখনই কালো হয় না বরং ত্বকের টোনের উন্নতি হয়।

৮। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে

রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে নাভিতে কয়েক ফোঁটা সরিষার তেল দিলে সুফল পাওয়া যায়।

৯। স্মরণশক্তি বৃদ্ধি ও চেতনার উন্নয়নে

সরিষার তেল স্মরণশক্তি বৃদ্ধি ও চেতনার উন্নয়নে সহায়তা করে।

১০। মাসিকের ব্যথা

মেয়েদের মাসিকের ব্যথা এবং গ্যাস ও বদহজম জনিত পেটের ব্যথায় সরিষার তেল পেটে মালিশ করলে সুফল পাওয়া যায়।

১১। পোকামাকড় এবং মশা তাড়ানো

পোকামাকড় এবং মশা তাড়ানোর জন্য ঔষধ হিসাবে সরিষার তেল ব্যবহৃত হয়। এর গন্ধে পোকামাকড় কাছে ঘেঁষে না। [তেহারী, বিরিয়ানি, চিকেন চাপ সবই পাবেন সুন্নাহ-ই-কাচ্চি এর পেইজে!]

১২। ওজন কমাতে সরিষার তেল

রিবোফ্ল্যাভিন (Riboflavin) ও নায়াসিন (Niacin) সমৃদ্ধ সরিষার তেল শরীরে মেটাবলিজম বাড়িয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে।

১৩। দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষায়

সুস্থ দাঁত ও জিঞ্জাভাইটিস ও পেরিওডন্টাইটিস রোগ প্রতিরোধে সরিষার তেল সহায়ক।

১/২ চা চামচ সরিষার তেল + ১ চা চামচ হলুদের গুঁড়া + ১/২ চা চামচ লবন মিশিয়ে দাঁত ও মাড়িতে হালকা করে দু’বেলা ঘষুন।

সতর্কতা

সরিষার তেলে থাকা ইরিউসিক এসিড (erucic acid) -এর কারনে রান্নার কাজে এই তেল যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং ইউরোপে ব্যবহার নিষিদ্ধ। তবে এটা বাহ্যিক ব্যবহার যেমন মালিশের জন্য এসব দেশে নিষিদ্ধ নয়।

শেষ কথা

বাজারে পাওয়া সব তেলের মধ্যে সরিষার তেল সব থেকে বেশী স্বাস্থ্যকর। তবে এটা হতে হবে খাঁটি ঘানি ভাঙ্গা সরিষার তেল বা কোল্ড প্রেসড (cold pressed)। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের দেশগুলিতে নিষিদ্ধ হলেও সরিষার তেল অন্যান্য দেশ বিশেষ করে এশিয়ার সর্বত্র রান্নার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। ইদানিং অনেকেই সয়াবিন তেলের পরিবর্তে খাঁটি ঘানি ভাঙ্গা সরিষার তেল ব্যবহার করা শুরু করেছেন।

Print This Post

About Amena Fatema

Check Also

রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য-বিনিয়োগ বাড়ানোর তাগিদ

বাংলাদেশ-রাশিয়া সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর …

Leave a Reply